পানাম নগরের ইতিহাস

পানাম নগরের ইতিহাস
চিত্র: বর্তমান পানাম নগরের একাংশ

পানাম নগর বাংলার প্রাচীনতম একটি শহর। পানাম নগর ওয়ার্ল্ড মনুমেন্ট ফান্ডের তালিকায় বিশ্বের ১০০ টি ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষের একটি।

পানাম নগরের ইতিহাস

পানাম নগর বাংলাদেশিদের কাছে ‘হারানো নগরী’ হিসেবে সুপরিচিত। ঈসা খাঁ ১৫ শতকের দিকে সোনাগাঁয়ে বাংলার প্রথম রাজধানী স্থাপন করেন। ২০ বর্গকি.মি. এলাকা নিয়ে নির্মিত পানাম নগর ছিল সোনারগাঁওয়ের নগরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও জাঁকজমকপূর্ণ। এই পানাম নগর থেকে সোনারগাঁও রাজ্য পরিচালিত হতো। পূর্বে মেঘনা ও পশ্চিমে শীতলক্ষ্যা নদী হয়ে থানকাপড় এবং মসলিন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেওয়া হতো। মেঘনা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তিরে প্রতিদিনই পালতোলা নৌকা ভিড়তো। সেই সময়ে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বাণিজ্যিক কার্যক্রম এবং চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে পানাম নগরী ইউরোপীয় অনুপ্রেরণার একটি নতুন ঔপনিবেশিক শৈলীতে নির্মিত হয়েছিল। ব্রিটিশরা এই পোশাক শিল্পের ব্যবসার দখল নেন এবং নীলের একটি বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করে। এখানকার হিন্দু ব্যবসায়ীরা ১৯৭১ সালে ভারতে চলে গেলে, সময়ের সাথে সাথে স্থানটি প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে এবং জরাজীর্ণ রূপ ধারণ করে।

ডব্লিউ.ডব্লিউ. হান্টারের মতে, সুলতানি আমলে সোনারগাঁওয়ের রাজধানী ছিল পানাম নগর। কিন্তু পানাম নগরে সুলতানি আমলের কোনো স্থাপত্য নেই, তাই কথাটির সত্যতা প্রমাণিত হয়নি। জেম্‌স টেলর বলেছেন, পানাম নগর সোনারগাঁয়ের প্রাচীন শহর ছিল। ঔপনিবেশিক ধাঁচের একতলা ও দোতলা বাড়ি রয়েছে শহরটিত, যার আধিকাংশ বাড়ি ঊনবিংশ শতাব্দির (১৮১৩ খ্রি. নামফলক রয়েছে)। মূলত পানাম ছিল তৎকালীন বাংলার ধনী ব্যবসায়ীদের আবাসস্থল। ঢাকা-কলকাতা জুড়ে ছিল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা। তারাই নগরটি গড়ে তোলে।

১৬১১ খ্রিস্টাব্দে মুঘলদের দ্বারা সোনারগাঁও দখলের পর, রাস্তা ও সেতু নির্মাণের কারণে পানাম এলাকা সরাসরি রাজধানীর সাথে যুক্ত হয়। পানাম পুল (বিলুপ্ত), পানামনগর সেতু ও দুলালপুর পুলের অবস্থান এবং তিন দিকের খালগুলি দেখে বোঝা যায় নগরটি একটা উপশহর ছিলো।

পানাম নগর সম্পর্কে তথ্য

  • পানাম নগর নারায়ণগঞ্জ জেলার, সোনারগাঁও উপজেলার একটি ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শহর।
  • প্রাচীন সোনারগাঁওয়ে খাস নগর, বড় নগর ও পানাম নগর এই তিন নগরের মধ্যে পানাম নগর ছিলো সবচেয়ে আকর্ষণীয়।
  • পানামের টিকে থাকা ৫২টি বাড়ির মধ্যে পানাম সড়কের উত্তর পাশে ৩১টি বাড়ি আর দক্ষিণ পাশে ২১টি বাড়ি রয়েছে, যা বার ভূইয়াঁদের সাথে সম্পর্কিত।
  • নগরীতে পানি সরবাহ করার জন্য দুপাশে ২টি খাল ও ৫টি পুকুর রয়েছে।
  • প্রতিটি বাড়ি একে অপরের থেকে সম্মানজনক দূরত্বে রয়েছে। নগরীতে যাতায়াত করার জন্য একটি মাত্র রাস্তা রয়েছে, যেটি নগরীর মাঝখান দিয়ে চলে গেছে।
  • নগরীর ভিতরে আবাসিক ভবন ছাড়াও রয়েছে মন্দির, মসজিদ, মঠ, গীর্জা, গোসলখানা, পান্থশালা, নাচঘর, চিত্রশালা, দরবার কক্ষ, খাজাঞ্চিখানা, চারালয়, গুপ্ত পথ ও পুরনো জাদুঘর।
  • এছাড়াও নগরীর চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ঈসা খাঁ ও তার ছেলে মুসা খাঁর প্রমোদ ভবন, সোনাকান্দা দুর্গ, ফতেহ শাহের মসজিদ, পঞ্চপীরের মাজার, চিলেকোঠা, কদম রসুলসহ বহু পুরাতাত্ত্বিক গুরুত্ববহ স্থাপনা।

আরো পড়ুন .....

পানাম নগর কেন বিখ্যাত? কোথায় অবস্থিত? কবে বন্ধ থাকে?
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url